কর্তার ভূত গল্পের নামকরণের সার্থকতা

আজকে আমরা কর্তার ভূত গল্পের নামকরণ এর সার্থকতা নিয়ে আলোচনা করছি । এটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং পরীক্ষাতে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি ।

কর্তার ভূত গল্পের নামকরণের সার্থকতা

‘কর্তার ভূত’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা ‘লিপিকা’ গ্রন্থের অন্তর্গত একটি রূপকধর্মী ছোট গল্প ।সাধারণত বিষয়বস্তু, স্থান-কাল, চরিত্র এবং ব্যঞ্জনার দিকে লক্ষ রেখেই সাহিত্যে নামকরণ করা হয়। কোনাে রচনার নাম শুধু রচনাটিকে চিহ্নিত করার উপায়মাত্র নয়।

গল্পের তিনি রূপক অবলম্বন করেছেন ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্যের অন্তঃসারশূন্য সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য। প্রাচীন সংস্কৃতির স্বরূপ বুড়ো কর্তা মারা যাওয়ার সময় তার ধারক গণেরা চিন্তায় পড়লে ঈশ্বরের ভরসায় তিনি ভূত হয়ে অবস্থান করেন। এই কর্তার ভূত সমস্ত দেশবাসীকে লালন পালন করে থাকে। যদি কেউ বেশি বুঝে ভূত শাসনের বাইরে যেতে চান তখন তাকে কান মলা খেতে হয়। এই ধরনের শাসন চলতে থাকলে দুই রকম জনগণের সৃষ্টি হয় – এক যারা ভূতকে মানে, আর দুই যারা ভুতকে মানে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গল্পে দেখিয়েছেন যে প্রাচীন সভ্যতার অবসান হলেও সে সভ্যতার ধর্মতন্ত্র আধুনিক ভারতবর্ষকে কেমন ভাবে চারদিক থেকে বেঁধে রেখেছে। আর এর ফলে যুক্তি-বুদ্ধি বিচার-বিবেচনা হীন পরাধীন দেশ বাসীরা সেই ধর্মতন্ত্র কে আঁকড়ে ধরে দিবানিশি ঘুমিয়ে দিন কাটায়।

ই গল্পে রূপকের আড়ালে প্রাচীন সভ্যতার ধর্মতন্ত্রের কারাগারে বন্দি থাকা ভারতবাসীর মৃতপ্রায় অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। বুড়াে কর্তার মৃত্যুকালে ভারতবাসী অভিভাবকহীন হয়ে পড়ার ভয় অনুভব করলে দেবতার দয়ায় বুড়াে কর্তা প্রেত হয়ে তাদের ছত্রছায়া হয়ে রইলেন। ফলে তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সুরাহা না হলেও, তারা শান্তিতে রইল। দু-একজন মানুষ মৌলিক চিন্তায় ভাবিত হলে তাদের কপালে জুটল ভূতের কানমলা’ অর্থাৎ শাস্তি। কিন্তু অন্ধের মতাে কর্তার ভূতকে অনুসরণ করে চলা সাধারণ দেশবাসী এই ঘটনায় আত্মশ্লাঘা বা গৌরব অনুভব করল।

ভূতুড়ে জেলখানার দেয়াল চোখে দেখা যায় না বলে, সেই কারাগার থেকে বেরােনাের উপায়ও কারাের জানা নেই। আর এই জেলখানার ঘানি পেষণ করলে কেবল বের হয় পেষণকারীর তেজ। তাই ভূতুড়ে জেলখানার কয়েদিরা ঠান্ডা থাকে, শান্তিতে থাকে। মৌলিক চিন্তাশীল ব্যক্তিরা অন্য কথা বললে কর্তার ভূতের সহযােগী শিরােমণি-চূড়ামণির দল দেশবাসীকে জানায় যে, ‘বেহুশ যারা তারাই পবিত্র, হুঁশিয়ার যারা তারাই অশুচি।’ দেশবাসী এতে আশ্বস্ত হলেও নবীনের দল যখন প্রশ্ন তােলে, “ভূতের শাসনটাই কি অনন্তকাল চলবে”, তখন ভূতের নায়েব রেগে গিয়ে ভয় দেখিয়ে বলে, “চুপ। এখনাে ঘানি অচল হয় নি।” দেশের কয়েকজন বুড়াে কর্তার প্রেতের কাছে মুক্তির আবেদন করলে তিনি জানান যে, “…তােরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।” এ কথা শুনে তারা জানায় যে, ভূতুড়ে কর্তাবাবুর নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতে তারা ভয় পায়। কর্তাবাবুর ভূত তখন বলেন, “সেইখানেই তাে ভূত। এই হল গল্পটির বিষয়বস্তু।

কর্তার ভূত রচনাটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই প্রাচীন সভ্যতার ধর্ম তন্ত্রের কথা আলোচনা করেছে ।
এই গল্পের মাধ্যমে আমরা সে জুগের মানুষের মানসিক অবস্থার বর্ণনা আমরা পেয়ে থাকি ।

এর জন্যই ভুতগ্রস্থ দেশবাসীর ইংরেজদের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস কখনও হয়ে ওঠেনি । পরিশেষে আমরা এই কথা বলতেই পারি যে এই রুপকধর্মী গল্পের নামকরন অবশ্যয় সঠিক এবং সার্থকপূর্ণ ।

Leave a Comment

error: