খিলাফৎ আন্দোলন কি? গান্ধীজী খিলাফৎ আন্দোলন আলোচনা কর

হ্যালো বন্ধুরা, আজকে আমরা খিলাফৎ আন্দোলন কি এবং গান্ধীজী কেন খিলাফৎ আন্দোলনকে অসহযোগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত করেন তা নিয়ে আজকের এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করবো । ইতিহাসের এই প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই প্রশ্নটি মন দিয়ে পড়ুন ।

খিলাফৎ আন্দোলন কি?

Contents

বঙ্গভঙ্গ রোধের ফলে পৃথক প্রদেশে মুসলিমদের সুবিধা বৃদ্ধির আশাভঙ্গ, বলকান যুদ্ধে তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের ভূমিকা প্রভৃতির কারণে মুসলিমদের সঙ্গে ব্রিটিশ এর সম্পর্কের ভাঁটা পড়ে । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্ক ব্রিটিশ বিরোধিতাকে জিহাদ আখ্যা দেয় এবং তার পরাজয়ের কারণে মুসলিমদের ধর্মগুরু খলিফার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে । খলিফার সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ব্যাবহারের দাবিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় খিলাফৎ সম্মেলনে ব্রিটিশ বিরোধী খিলাফৎ ঘোষণা করা হয় । দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তিনি ফিরে এসে তিনি ভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে ওতোপ্রিত ভাবে জড়িয়ে পড়েন । গান্ধীজীর কাছে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল ভারতের স্বাধীনতা যা অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব । গান্ধীজী লক্ষ্য করেন যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মূল্যবৃদ্ধি, দুর্ভিক্ষ ও অপর্যাপ্ত ত্রাণ ব্যাবস্থা, রওলাট আইন ও জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড প্রভৃতি হিন্দু, মুসলিম উভয়কে প্রভাবিত করেছে ।

মুসলিমদের ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবের মধ্যে তিনি কংগ্রেসী আন্দোলনকে বৃহত্তর রুপ দেওয়ার তথা স্বরাজের দাবীকে জোরালো করার লক্ষ্যে মুসলিমদের সমর্থনের আশা করেন । কারণ রাজনৈতিক ভাবে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে ভারতে হিন্দু-মুসলমানদের ঐক্য আন্দোলন ছাড়া ভারতে ব্রিটিশ সরকার এর কাছ থেকে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে না । তিনি আরও মনে করেছিলেন যে কেবল হিন্দুদের নিয়ে জাতীয় মুক্তিকে বাস্তবে পরিণিত করা যাবে না । জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে মুসলমানদের সামিল করতে হবে এবং তারা যাতে কংগ্রেস এর সাথে একাত্মতা স্থাপন করে সেদিকে নজর দিতে হবে । জুডিথ ব্রাউন এর মতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, হিন্দু মুসলমান মিলনে এমন সুযোগ আর কখনও হবে না । খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ও অমুসলিম ভারতীয়দের এই আন্দোলনে যোগদানের আশ্বাস জানিয়ে ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় গান্ধীজীর বক্তব্য খিলাফৎ কমিটিকে অভিভূত করেছিল ।

গান্ধীজীর আন্তরিকতায় অভিভূত খিলাফৎ কমিটি দিল্লিতে সর্বভারতীয় খিলাফৎ কমিটি সর্বভারতীয় খিলাফৎ সম্মেলনে গান্ধীজীকে সভাপতি পদে বসিয়ে সম্মানিত করেন । এই সম্মেলন থেকে ব্রিটিশ সরকার কে জানিয়ে দেওয়া হয় সম্মানজনক ভাবে মুসলমানদের দাবী পূরণে সরকার ব্যর্থ হলে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে ।

১৯১৯ সালের কংগ্রেসের অমৃতসর অধিবেশনে গান্ধীজীর উদ্যোগে খিলাফৎ আন্দোলনের আলোচনার বিষয়টি গুরুত্ব লাভ করে । তিনি ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ দিনটিকে খিলাফৎ দিবস পালন করার জন্য হড়তালের ডাক দেন । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে তুরস্কের সঙ্গে মিত্রপক্ষের সেভরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে গান্ধীজী মুসলিম নেতাদের কাছ অহিংসা ও অসহযোগ আন্দোলনের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তাব দিলে খিলাফৎ কমিটি তা গ্রহণ করে ।

গান্ধীজী কেন খিলাফৎ আন্দোলনকে অসহযোগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত করেন

১৯২০ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে খিলাফৎ কমিটি অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করলে গান্ধীজী সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে যোগদান করেন এবং ভারতে ৭ কোটি মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য ২৩ কোটি হিন্দুদের আহ্বান জানান । এরপর ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজী আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফৎ আন্দোলনকে অসহযোগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত করেন ।

আজকের এই পোস্টে আমরা খিলাফৎ আন্দোলন আশা করি পোস্ট টি তোমাদের অনেক ভালো লেগেছে । আমাদের ওয়েবসাইটে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করা হয় ।

Leave a Comment

error: